সম্মান ও মর্যাদার মালিক একমাত্র আল্লাহ। যেকোনো পরিস্থিতিতে তাঁর ওপর আস্থা রেখে যারা নির্ভর করে, তিনি তাদের সম্মানিত করেন। আর যারা পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তাদের রয়েছে লাঞ্ছনা। বান্দা যদি দুনিয়ার লোভে কোনো সৃষ্টির সামনে নিজেকে অবনত করে, তবে আল্লাহ তাকে অপমানিত করেন।
আর যে ব্যক্তি দুই হাত আকাশের দিকে তোলে (আল্লাহর কাছে), আল্লাহ তার মর্যাদা উঁচু করে দেন। কারণ ইসলামের শিক্ষা হলো সৃষ্টির কাছে মুখাপেক্ষী না হয়ে আত্মমর্যাদা বজায় রাখা ও সংযত থাকা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘কেউ যদি সম্মান চায় (তবে তা যেন আল্লাহর কাছেই চায়), কেননা সব সম্মান আল্লাহরই।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ১০)।
অতএব, মুমিনের সম্মান তার সংযমে, তার মর্যাদা তার সন্তুষ্টিতে, আর তার প্রকৃত সম্বল আল্লাহর ওপর ভরসায়। ইসলাম মানুষকে আত্মমর্যাদা ও সংযমের প্রতি উৎসাহ দেয়, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া অহেতুক হাত পাতা ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় কাজ।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যার হাতে আমার জীবন, সেই সত্তার কসম! তোমাদের মধ্যে কারো রশি নিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে পিঠে করে বয়ে আনা, কোনো লোকের কাছে এসে চাওয়া অপেক্ষা অনেক ভালো, চাই সে দিক বা না দিক। (বুখারি, হাদিস : ১৪৭০)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি (অভাবের তাড়না ছাড়াই) নিজের সম্পদ বাড়ানোর জন্য মানুষের কাছে সম্পদ ভিক্ষা করে বেড়ায়, বস্তুত সে আগুনের ফুলকি ভিক্ষা করছে। কাজেই এখন তার ভেবে দেখা উচিত সে বেশি নেবে, না কম নেবে। (মুসলিম, হাদিস : ২২৮৯)
মহানবী (সা.)-এর দিকনির্দেশনা মানুষকে মহান আল্লাহর ওপর নির্ভর করে সম্মানজনক জীবিকা লাভের জন্য চেষ্টা করার প্রতি উৎসাহ দেয়। যারা অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে হাত পাতে, নিজেকে দরিদ্র হিসেবে চিত্রিত করে, ইসলাম তাদের পছন্দ করে না। এদের সহযোগিতা করার প্রতিও উৎসাহ দেয় না, বরং ইসলাম এমন মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতার প্রতি উৎসাহ দেয়, যার প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও সে আল্লাহর ওপর ভরসা করে হাত পাতা থেকে বিরত থাকে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, প্রকৃত মিসকিন সে নয়, যে মানুষের কাছে ভিক্ষার জন্য ঘুরে বেড়ায় এবং দু-এক লুকমা অথবা দু-একটি খেজুর পেলে ফিরে যায়, বরং প্রকৃত মিসকিন সেই ব্যক্তি, যার এতটুকু সম্পদ নেই, যাতে তার প্রয়োজন মিটতে পারে এবং অবস্থা সেরূপ বোঝা যায় না যে তাকে দান-খয়রাত করা যাবে আর সে মানুষের কাছে ভিক্ষা করে বেড়ায় না। (বুখারি, হাদিস : ১৪৭৯)
এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায়, তারাই সাহায্যের প্রকৃত হকদার, যাদের লজ্জা তাদের হাত পাতা থেকে বিরত রাখে এবং আল্লাহ তাদের আত্মসম্মান ও গোপনীয়তা দিয়ে সম্মানিত করেন।
তবে মুসলমানের শান হলো, অভাব-অনটন দেখা দিলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে তা থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা, মেধা ও শক্তিকে কাজে লাগানো। যাতে অন্যের কাছে হাত পাততে না হয়, বরং হালাল পথে উপার্জন করে অপর মুসলমানকে সহযোগিতা করা যায়, ইসলামের খিদমতে অর্থ ব্যয় করা যায়।
এ ব্যাপারে উৎসাহ দিতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ওপরের হাত নিচের হাতের চেয়ে উত্তম। ওপরের হাত হলো দানকারী। আর নিচের হাত হলো দান গ্রহণকারী। (বুখারি, হাদিস : ২২৭৫)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হালাল উপার্জনের তাওফিক দান করুন এবং তাতে ভরপুর বরকত দান করুন। আমিন।