ভাড়ার চুক্তির কাগজকে ঢাল বানিয়ে একটি এসি বাস আত্মসাৎ ও জিম্মি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে খুলনায়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে আসায় কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছেন বাস মালিক। প্রশ্ন উঠেছে—আইন কার জন্য, আর ক্ষমতা কার জন্য?
চুক্তির নামে ফাঁদ।
জানা গেছে, ঢাকার লালবাগ এলাকার বাসিন্দা মোঃ বেলাল হোসেন (পিতা: সুজাবত আলী) তার মালিকানাধীন একটি এসি বাস এক বছরের জন্য ভাড়ায় দেন।
চুক্তিটি হয় ১০০ টাকার ৩ টি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে, মেয়াদ নির্ধারিত হয় ২০ নভেম্বর ২০২৫ থেকে ২১ নভেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত।
ভাড়াটিয়া হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হন খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার মোঃ বারেক তালুকদার (পিতা: মোঃ ইসনেত আলী তালুকদার)।
চুক্তি অনুযায়ী—
বাসটি রয়েল মৈত্রী পরিবহন–এ চলবে
প্রতি মাসে বাস মালিককে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ভাড়া পরিশোধ করার কথা কিন্তু বাস্তবে চুক্তি কার্যকরের আগেই শুরু হয় ভিন্ন কৌশল।
‘রিজার্ভ’ অজুহাতে বাস গায়েব
ঘটনার মোড় ঘোরে ১১ ডিসেম্বর। ভাড়াটিয়া পক্ষ “রিজার্ভ দেওয়ার” কথা বলে বাসটি খুলনা বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যায়। এরপরই বাসটি কার্যত মালিকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
বাসটির চালক মোঃ বিপ্লব পরিস্থিতি সন্দেহজনক মনে করে তাৎক্ষণিকভাবে বাস মালিক বেলাল হোসেনকে বিষয়টি জানান। এরপর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। টাকা না দিলে বাস যাবে না ঢাকায়
অভিযোগ রয়েছে, ঘটনার পরপরই ভাড়াটিয়া পক্ষ বাস মালিকের কাছে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ফেরত দাবি করে।
দাবি মানা না হলে—
বাস ঢাকায় পাঠানো হবে না এলাকায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নাম ব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখানো হয়।
বাসটি বর্তমানে খুলনায় জিম্মি অবস্থায় রয়েছে বলে দাবি মালিক পক্ষের।
প্রশাসন জানে, তবু নীরব উপায় না পেয়ে বাস মালিক ৯৯৯-এ কল দিয়ে সহায়তা চান। খুলনা থানা বিষয়টি অবগত হয় এবং সমাধানের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে—
অভিযুক্ত মোঃ বারেক তালুকদার এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
ঘটনার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও বাস উদ্ধার কিংবা আইনগত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
ড্রাইভার বিপ্লব বলেন, তার মোবাইল ফোনে সাজ্জাদ নামের এক ব্যক্তি ঢাকা আরামবাগ থেকে হুমকি দেন এবং অভিযুক্ত বারেক তালুকদার কে বলেন, উক্ত গাড়ির ড্রাইভার স্টাফ কে মেরে হাত পা ভাঙ্গিয়ে দিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন।পরে বিষয়টি আমরা দেখব।
ভাড়াটিয়ার পাল্টা দাবি
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোঃ বারেক তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভিন্ন বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আমি এক বছরের জন্য বৈধভাবে বাসটি ভাড়া নিয়েছি। কিন্তু আমাকে কিছু না জানিয়েই বাস মালিক বেঙ্গল পরিবহনের মালিক শামীম সাহেবের কাছে বাসটি বিক্রয় করে দেন। এরপর আমাকে ভাড়ায় চালাতে না দিয়ে রিজার্ভে দেওয়া হয়। তাই বাসটি আমি আটকে রেখেছি।
তবে এই দাবির পক্ষে কোনো লিখিত নোটিশ বা আইনি কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি।
মালিকের আতঙ্ক: পুড়লে দায় নেবে কে?
বাস মালিক বেলাল হোসেন চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,
একটা এসি বাস এভাবে জিম্মি করে রাখা কতটা নিরাপদ? প্রশাসন জানে, তবু নীরব। যদি বাসে আগুন দেওয়া হয় বা যন্ত্রাংশ নষ্ট করা হয়, তার দায়ভার কে নেবে?
আইনের ঊর্ধ্বে কি প্রভাবশালীরা?
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে,ভাড়ার চুক্তিতে নেওয়া কোনো যানবাহন জিম্মি করে রাখা বেআইনি টাকা-পয়সা সংক্রান্ত বিরোধ থাকলে তা আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তিযোগ্য জোরপূর্বক আটক রাখা ফৌজদারি অপরাধ।
তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়, প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না?
রাজনৈতিক পরিচয় কি আইনের ঢাল হয়ে উঠছে?
একজন সাধারণ নাগরিক কি তার সম্পদের নিরাপত্তা পাবেন না?
অনুসন্ধান চলবে……..