‘‘শীত যায় শীত আসে,ছয় ঋতু বার মাসে,ঋতু চক্রের বৈশিষ্টে অন্যান্য ঋতুর যেমন বৈশিষ্টের ভিন্নাতা রয়েছে তেমনি শীত ঋতুও তার বাহিরে নয়,তাই শীত ঋতুতে শীত হবে এটাই এ ঋতুর ধর্ম হলেও সমস্যার যেন শেষ নেই। তাই শীত ঋতু এলেই বিশেষ করে নিম্ন আয়রে খেটে খাওয়া মানুষ ,অতি দরিদ্র মানুষ-এবং শিশু ও বৃদ্ধ মানুষদের নিয়ে পোহাতে হয় বহুমুখি ঝামেলা’’।
উত্তরাঞ্চলে জেলা শহর জয়পুরহাট। একেবারে শীতে নাজেহাল বা শীত প্রবণ এলাকার তালিকায় নাথাকলে একেবারে যে কম তা নয়। তাইতো শীত মৌসুম এলেই মাঝে মধ্যেই শীত যেন ঘাড়ে চেপে বসে।‘‘টানা সপ্তাহ জুড়ে পশ্চিমা বাতাসে অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে এ জেলার জনজীবন। গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বুধবার পর্যন্ত হাড়কাপানো শীত জেঁকে বসেছে জেলার সর্বত্র । ঘন কুয়াশার সথে বৃদ্ধি পেয়েছে শীতের প্রকোপ, বৃষ্টির পানি মত ঝড়ছে ঘন কুয়াশা। ভিজে গেছে পাকা সড়ক । মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে। জীবিকার প্রয়োজনে বের হচ্ছেন শ্রমজীবী অতিদরিদ্র এবং নিম্ন আয়ের মানুষ । ফলে শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। হাসপাতালগুলোতে বেড়েই চলেছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর-২০২৫) সকাল ১২টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অসহায় বস্তিবাসী ও ছিন্নমূল মানুষরা। আবার বিশেষ করে চাষীরা আলুর ক্ষেত ও আগাম ইরি-বোরো রোপণের কাজ করতে পড়েছেন চরম বিপাকে।
নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম বলেন, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর-২০২৫) ভোর ৬ টায় জয়পুরহাটসহ পার্শ্ববর্তী নওগাঁর বদলগাছীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৯ ডিগ্রি সে:সি:। সকাল ৯টাতে ও অপরিবর্তিত থাকে তাপমাত্রা। গত কয়েকদিনের তুলনায় তাপমাত্রা আজ কিছুটা কম-কুয়াশা বেশি। হালকা বৃষ্টির মত পড়ছে কুয়াশা।
জেলার কালাই উপজেলার পাঁচশিরা বাজারের ইসমাইল হোসেন, ক্ষেলালের দিন মুজুর আজাদুল এবং জয়পুরহাট সদরের অটো রিক্সা চালক নাজিম,রফিকুল ও মনোয়ার হোসেন বলেন বলেন , শীত যেমন-তেমন ঘন কুয়াশার মধ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে যেমন শরীর ভিজে যায় তেমনই হচ্ছে। আর এ অবস্থায় বাড়ির বাহির না হলেও চলেনা,আমাদের মত লোকজনদের জীবিকার তাগিদে বের হতেই হবে। রাস্তায় কোনো লোকজন নেই। তারপরও বের হয়েছি।
জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কে বিআরটিসির বাসচালক মুহিবুল বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে একই অবস্থা। কুয়াশা কমে না। দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে বাস চালাতে হচ্ছে। পাবনা থেকে বাসটি মাত্র কয়েকজন যাত্রী নিয়ে জয়পুরহাট পর্যন্ত আসছি। ঠাণ্ডার কারণে যাত্রী নেই বললেই চলে। এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়তো বাস চলাচল বন্ধ রাখতে হবে।
বুধবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে হাসপাতাল মোড়ে কথা হয় পাঁচবিবি উপজেলার দানেসপুর গ্রামের আব্দুল বারিকের সাথে। তিনি বলেন, কয়েকদিনের প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে গত রাতে আমার এক প্রতিবেশী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।হাসপাতালে তাকে ভর্তি করেছি, স্যালাইন চলছে এখন ওষুধ নিতে এসেছি। ।
এদিকে, শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছেন,গেল কয়েকদিনে তুলনায় মঙ্গলবার বিকেল থেকে হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েছে। নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আবার ইতোমধ্যে অনেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িও গেছেন।
জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: রাশেদ মোবারক জুয়েল বলেন, কয়েকদিনের প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারনে শিশু ও বৃদ্ধরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শীত বাড়ায় শিশু ও বয়স্কদের ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ ও দেন এই কর্মকর্তা।