সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
সিরাজগঞ্জে ড্রেজার থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার সিরাজগঞ্জে ড্রেজার থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার কাজিপুরে পাট চাষিদের দিনব্যাপী  প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত  কাজিপুরে অবৈধভাবে সার বিক্রির দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতে ব্যবসায়ীকে অর্থদণ্ড কৃষকের ঝুঁকি ও অসহায়ত্ব ঘোচাতে এগিয়ে এসেছে আই-ফার্মার। পুলিশ করজোড়ে মাফ চেয়েও প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলাকারীদের থামাতে পারেনি: ডিএমপি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেন আসিফ মাহমুদ খেলোয়াড়দের বড়দিনের বাড়তি ছুটি বাতিল করলেন গার্দিওলা আজ সব গণতন্ত্রকামী মানুষের এক হওয়ার সময় এসেছে: মির্জা ফখরুল সীমান্তে ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ, আটক ২৭
নোটিশ:
তথ্য ও প্রচার মন্ত্রণালয় নিবন্ধনকৃত অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য পিপলস্ নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকে সারা দেশে জেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হবে। মোবাইল: ০১৭১১-১১৬২৫৭, ০১৭১২-৪০৭২৮২ ' ই-মেইল : thepeopelesnews24@gmail.com

কৃষকের ঝুঁকি ও অসহায়ত্ব ঘোচাতে এগিয়ে এসেছে আই-ফার্মার।

জলিল রানা, জয়পুরহাট প্রতিনিধি : / ১ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫

কৃষকের ঝুঁকি ও অসহায়ত্ব ঘোচাতে এগিয়ে এসেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় কৃষি-প্রযুক্তি (অ্যাগ্রি-টেক) প্রতিষ্ঠান আই-ফার্মার। ভোরের রক্তিম সূর্য আলো ছড়ানোর আগেই দেশের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে শুরু হয় কৃষকের নিত্যদিনের মহা কর্মযজ্ঞ। কেউ কোদাল ধরেন জমিতে, কেউ লাঙল, কেউ  বীজ ছেটাতে (বপনে) ব্যস্ত। কেউবা আবার সেচ দেন জমিতে, কেউ ছেটান জমিতে সার ও কীটনাশক । দেশের যে কৃষক শ্রেণী পেশার মানুষ ‘কিষাণ-কিষাণীরা’রোদে পুড়ে-মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কখনো বা বৃষ্টিতে ভিজে প্রতিনিয়তই দেশের মানুষের অন্নের বহুমাত্রিক জোগান দিতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন। তাদের হাড়ভাঙ্গা এই শ্রমজীবনের গল্পের অন্তড়ালেই লুকিয়ে থাকে প্রতিদিনের বেদনাদায়ক গভীর অনিশ্চয়তা।

সোনালী রোদে দিগন্তজোড়া মাঠে বালি,ধূসর,পলি আরসবুজ সবুজ মাটির বুকচীরে শ্রমজীবী এই মানুষগুলোর সবুজ-সোনালী সহ বহুমাত্রিক ফুল ফসল ফলনো বা চাষাবাদের ঝুঁকি-তো আছেই, তার ওপরে রয়েছে আবার ব্যক্তি জীবনে নেমে আসা অপ্রত্যাশিত নানা দুর্যোগের আশঙ্কা। অসুখ, দুর্ঘটনা কিংবা অকালমৃত্যু যে কোনো সময়-ই এই পরিশ্রমী মানুষগুলোর সাজানো জীবণ সংসার তছনছ করে দিতে পারে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বন্ধ হয়ে গেলে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। ঋণের বোঝা তখন যেন মনে হয় পাহাড় সমপরিমান । কৃষকের এই ঝুঁকি ,অসহায়ত্ব ও নানামুখি দুর্দশা ঘোচাতে তাদের পাশে আশার আলো হয়ে এগিয়ে এসেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় কৃষি-প্রযুক্তি (অ্যাগ্রি-টেক) প্রতিষ্ঠান ‘আই-ফার্মার’।

দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালে চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স লি: ও গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাথে অংশীদারিত্বে বিশেষ এক বীমা কাঠামো চালু করেছেন। কেবল ফসলের উৎপাদন বাড়াবে এমনটাই নয়, বরং কৃষকের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও কাজ করে যাচ্ছেন এই প্রতিষ্ঠানটি। কৃষকদের সুরক্ষা নিশ্চিতে এখানে রাখা হয়েছে দু’টি প্রধান সুবিধা ,একটি হলো ঋণ সুরক্ষা বীমা এবং অপরটি স্বাস্থ্য সুরক্ষা বীমা। এই দু’টি দ্বৈত সুরক্ষা সেবা কৃষকদের মাঝে যেন তৈরি করেছে একটি মজবুত অর্থনৈতিক ভিত্তি ।

ঋণ সুরক্ষা বীমা:

ঋণ সুরক্ষা বীমার আওতায় কোন কৃষক যদি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মৃত্যুবরণ করেন কিংবা স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন, তবে তার পরিবারকে আর ঋণের বোঝা টানতে হয় না। এই বীমা সুবিধার মাধ্যমে কৃষকের অবশিষ্ট ঋণের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়। এটি নিশ্চিত করে যে, পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে বা অক্ষমতার কারণে পরিবারকে নতুন করে আর্থিক সংকটে আর পড়তে হবে না। এমনকি ওই কৃষক পরিবারের তাৎক্ষণিকভাবে আর্থনৈতিক সংকট মেটাতেও প্রদান করা হয় নগদ আর্থিক সহায়তা । অসময়ে এই সহায়তা নিয়ে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোই একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ।

এই সুবিধার বাস্তব উদাহরণ মিলেছে নওগাঁ সদরের মো শেরপুর এলাকার বাসিন্দা মোছা: গোলাপী বেগম পরিবারে।  তিনি পোল্ট্রি প্রকল্পের জন্য ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণ পরিশোধের আগেই এ বছরের ৪ অক্টোবর-২০২৫ হঠাৎ স্ট্রোক করে তিনি মারা যান।

মরহুমা গোলাপী বেগমের স্বামী নাজমুল হক আই-ফার্মার’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমার স্ত্রী আই-ফার্মা থেকে ঋণ নিয়েছিল। হঠাৎ মারা যাওয়ার পর তারা পুরো ঋণ মওকুফ করে দিয়েছেন। আর তাছাড়া স্ত্রীর দাফন-কাফনের জন্য আরও ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। অন্য সমিতির তুলনায় এই আই-ফার্মার সুবিধা আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। এখানে কোনো সঞ্চয় রাখতে হয় না আর ঋণের জন্য পোহাতে হয়নি কোনো ঝামেলা ।

‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা বীমা’:

অন্যদিকে কৃষকের শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে চালু করা হয়েছে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা বীমা’। একজন কৃষক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা হয় এই বীমার মাধ্যমে । শুধু তাই-ই নয়, চিকিৎসকের পরামর্শ ফি, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণের খরচও পাওয়া যায় এখান থেকে । এতে করে একদিকে যেমন চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে কৃষক পরিবারকে তার শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করতে হয় না, তেমনি অন্যদিকে পড়তে হয় না কঠিন পরিস্থিতিতে ।

বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার চেংগাপাচপুকুরিয়া এলাকার গ্রাহক আবু হানিফ বলেন, আমি প্রথমবার ধানের ওপর ৫০ হাজার টাকা লোন নিয়েছিলাম, যা ৬ মাস পর শোধ করেছি। পরে আবার ৫০ হাজার টাকা আলুর ওপর লোন নিয়েছি। আই-ফার্মার থেকে লোন নেওয়া অন্যান্য সমিতির তুলনায় অনেক সুবিধাজনক। এখানে মানসিক কোনো চাপ থাকে না। লোন নিলাম, আবার শোধ করলাম। আর আমি স্বাস্থ্য বীমা করেছি। তারা আমাকে ১ বছর মেয়াদের একটি কার্ড দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কোনো অসুখ, দুর্ঘটনা বা শরীরিক সমস্যা হলে তারা সহযোগিতা করবে।

আই-ফার্মার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া অবহেলিত
সহজ পদ্ধতির ব্যাপক সাড়া :

এই উদ্যোগটি শুরুর মাত্র কিছু সময়ের মধ্যেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আর ইতোমধ্যেই এই সুরক্ষাসেবার আওতায় এসেছেন প্রায় ১৫ হাজারের ও বেশি কৃষক । এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে ২৮টি বীমা দাবিও , এই সহায়তাগুলো কেবল মাত্র পরিসংখ্যানের জন্যই নয়, বরং এটি বিপদগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য বেঁচে থাকা ও জীবণ-জীবিকার অবলম্বন হিসেবেও কাজ করছে।

একই উপজেলার আতাইল গ্রামের কৃষক আল-আমিন বলেন, আই-ফার্মার কৃষকদের জন্য খুব ভালো। কেননা অন্য এনজিও বা সমিতিতে গেলে সঞ্চয় রাখতে হয় আবার মাসিক একটি ডিপিএস খুলতে হয়। কিন্তু এখানে এটি দিতে হয় না। শুধু একবার ফি দিয়ে সদস্য হয়ে যত টাকা লোন নিব, তার ওপর আবেদন করলেই টাকা পাওয়া যায়। আবার লোনের মেয়াদের উপর একটা লাভ দিয়ে পরিশোধ করতে হয় উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, কৃষকদের জন্য তাদের স্বাস্থ্য বীমা আছে, যা তিনি নিজে করেছেন। ১ বছরের মধ্যে আমার কিছু হলে তার পাশে দাঁড়াবে বলেও জানান এই কৃষক।

এ বিষয়ে আই-ফার্মার’র হেড অফ নিউ বিজনেস অপারচুনিটিজ মোহাম্মদ ইখতিয়ার সোবহান বলেন, “বীমা নিয়ে মানুষের, বিশেষ করে কৃষকদের মাঝে যে নেতিবাচক ধারণা কাজ করে সেগুলি নিয়ে আমরা আমাদের সহযোগী বীমা কোম্পানীদের নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বীমা সুবিধা দাবি করার জটিলতা, ক্ষতিপূরণ পেতে দেরি হওয়া ইত্যাদি সমস্যাগুলো অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছি যদিও আরও উন্নতির জায়গা আছে। আমরা আশা করছি সংশ্লিষ্ট সবপক্ষ এগিয়ে এলে কৃষকরা, যাদের সত্যিকারে বীমা সুরক্ষা দরকার তারা সেই সুবিধা পুরোপুরি পাবেন।”

কৃষকের জীবন ও জীবিকার অনিশ্চয়তা দূর করে তাদের আত্মবিশ্বাস ও স্থিতিশীলতা দিতে আই-ফার্মার’র এই দ্বৈত বীমা কাঠামো দেশের কৃষিখাতে নতুন আশার সঞ্চার করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে, প্রযুক্তির সহায়তায় কৃষকদের পাশে দাঁড়ালে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এবং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

উল্লেখ্য, আই-ফার্মার (iFarmer) বাংলাদেশের একটি কৃষি-প্রযুক্তি (Agri-Tech) প্রতিষ্ঠান, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের জন্য একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে; আর এর মাধ্যমে কৃষকরা আর্থিক সহায়তা, উন্নতমানের বীজ ও উপকরণ, কৃষি পরামর্শ, এবং উৎপাদিত পণ্যের জন্য বাজার সংযোগ পায়, যার ফলে কৃষির পুরো সরবরাহ শৃঙ্খল ডিজিটাল ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে এবং ঝুঁকি কমছে কৃষকদের ।
আই-ফার্মারের মূল কার্যক্রম:
অর্থায়ন (Financing): ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কৃষকদের জন্য কম সুদে ঋণ ও আর্থিক পরিষেবা সহজলভ্য করে।
কৃষি উপকরণ (Inputs): উন্নতমানের বীজ, সার, ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ করে।
পরামর্শ ও ডেটা (Advisory & Data): কৃষিবিদদের পরামর্শ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) মাধ্যমে ডেটা-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।
বাজার সংযোগ (Market Linkage): উৎপাদিত ফসলের জন্য নিশ্চিত বাজার ও ক্রেতা খুঁজে পেতে সাহায্য করে, এমনকি রপ্তানির সুযোগ তৈরি করে।
জলবায়ু-বান্ধব সমাধান (Climate-Smart Solutions): জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়ক প্রযুক্তি ও সমাধান প্রদান করে।
উদ্দেশ্য:
কৃষি খাতে ডিজিটাল রূপান্তর আনা।
কৃষকদের অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি হ্রাস করা।
কৃষি সরবরাহ শৃঙ্খল কি আরও দক্ষ ও লাভজনক করে তোলা।
সংক্ষেপে, আই-ফার্মার প্রযুক্তির সহায়তায় কৃষকদের আর্থিক ও প্রযুক্তিগতভাবে ক্ষমতায়িত করে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কৃষি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে কাজ করছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর