বগুড়ার শেরপুরে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠে এখন শুধু হলুদের সমারোহ। চারদিকে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। গত বছর সরিষা চাষে কৃষকরা বেশ লাভবান হলেও এ বছর এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি পূরণ হয়নি। তবে প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও মাঠের পর মাঠ হলুদে ছেয়ে যাওয়ায় বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা।
সরেজমিনে শেরপুর পৌরসভাসহ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সরিষার হলুদ ফুল প্রকৃতিতে এক নান্দনিক রূপ দিয়েছে। ফুলের সুবাস চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে, যা আকৃষ্ট করছে মৌমাছি ও প্রকৃতিপ্রেমীদের। সরিষার ক্ষেতে বসছে পোকা খাদক সুইচোরা, বুলবুলি ও শালিকের ঝাঁক। এই মনোরম দৃশ্য দেখতে এবং ক্যামেরাবন্দি করতে দূর-দূরান্ত থেকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও প্রকৃতিপ্রেমীরা ভিড় করছেন সরিষার মাঠে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শেরপুরে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৩২৭০ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও এ পর্যন্ত প্রায় ২১৮১ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পেছনে প্রতিকূল আবহাওয়াকে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কৃষক ফারুক হোসেন, আশরাফ আলী ও গোলাম মোস্তফা জানান, গত বছর তারা সরিষা চাষ করে লাভবান হয়েছিলেন। এ বছরও গাছ ও ফুল খুব ভালো হয়েছে। তারা আশা করছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও ভালো লাভ হবে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, সরিষা চাষ কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। এতে সেচ, সার ও কীটনাশক খরচ অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক কম লাগে। সরিষা কেবল ভোজ্য তেলের ঘাটতি মেটায় না, এটি ভাঙিয়ে খৈল ও ভূষি পাওয়া যায় যা গরুর পুষ্টিকর খাদ্য। এছাড়া শুকনো সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবেও চমৎকার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ কিছুটা কম হলেও এখন পর্যন্ত সরিষার অবস্থা বেশ ভালো। যদি বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, তবে এবার সরিষার আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের মতে, বড় কোনো রোগ-বালাই বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে এবার শেরপুরে সরিষার ‘বাম্পার ফলন’ হবে। এতে একদিকে যেমন কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দেবে, অন্যদিকে দেশের ভোজ্য তেলের বাজারেও এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।