মানুষ কবে প্রথম আগুন জ্বালাতে শিখেছিল—এই প্রশ্নের উত্তরে বড় পরিবর্তন আনল নতুন এক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। ইংল্যান্ডের সাফোক অঞ্চলের বার্নহ্যাম গ্রামে পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ বলছে, প্রায় চার লাখ বছর আগেই প্রাচীন মানুষ আগুন তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। আগে ধারণা ছিল, মানুষ নিজেরা আগুন জ্বালানো শিখেছে মাত্র প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে।
গবেষকরা ওই এলাকায় পোড়া মাটি, আগুনে ফাটা পাথরের সরঞ্জাম এবং লৌহ পাইরাইটের (iron pyrite—এক ধরনের খনিজ, যা পাথরের সঙ্গে আঘাতে স্ফুলিঙ্গ তৈরি করে) বিরল টুকরো খুঁজে পান। এই পাইরাইট স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায় না। ধারণা করা হচ্ছে, বহু কিলোমিটার দূরের উপকূলীয় এলাকা থেকে এটি সংগ্রহ করে আগুন জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল।
মাটির রাসায়নিক পরীক্ষা দেখায়, সেখানে থাকা কাদামাটির কিছু অংশ বারবার ৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপে উত্তপ্ত হয়েছিল। এতে স্পষ্ট হয়, ওই জায়গায় নিয়মিত আগুন বা চুলা ব্যবহার করা হতো।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই আগুন ব্যবহারকারী মানুষরা আধুনিক মানুষ নয়, বরং প্রাচীন নিয়ান্ডারথাল (Neanderthal—আধুনিক মানুষের আগের মানবগোষ্ঠী)। কারণ, আধুনিক মানুষ বা হোমো স্যাপিয়েন্স আফ্রিকা ছেড়ে ইউরোপে আসে অনেক পরে, প্রায় এক লাখ বছর আগে। ব্রিটেন ও ইউরোপের জীবাশ্ম তথ্যও সে কথাই সমর্থন করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগুনের নিয়ন্ত্রণ মানব বিবর্তনে বড় ভূমিকা রেখেছে। আগুন মানুষকে উষ্ণতা, আলো, বন্যপ্রাণীর হাত থেকে সুরক্ষা এবং খাবার রান্নার সুযোগ দিয়েছে। এর ফলে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, মস্তিষ্কের বিকাশ ত্বরান্বিত হয় এবং শীতল অঞ্চলে টিকে থাকা সহজ হয়।
গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচারে। গবেষকরা একে প্রাচীন মানব আচরণ বোঝার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার হিসেবে দেখছেন।