শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
নোটিশ:
তথ্য ও প্রচার মন্ত্রণালয় নিবন্ধনকৃত অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য পিপলস্ নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকে সারা দেশে জেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হবে। মোবাইল: ০১৭১১-১১৬২৫৭, ০১৭১২-৪০৭২৮২ ' ই-মেইল : thepeopelesnews24@gmail.com

ইসলামে শহীদের অনন্য মর্যাদা

অনলাইন ডেস্ক: / ৫ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫

মানুষ মাত্রই মরণশীল। প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)

এই পরম সত্য সবাইকেই মেনে নিতে হবে।

মুসলিম হোক, অমুসিলম হোক—সবাইকেই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। কিন্তু যারা দুনিয়ায় থাকা অবস্থায়ই নিজের জীবন-মৃত্যু সবকিছু আল্লাহর জন্য ওয়াক্ফ করে দেবে, তারাই সৌভাগ্যশীল; বরং ঈমানের নিদর্শন হলো নিজের জীবন, মরণ—সবকিছু আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, আমার নামাজ, আমার সব ইবাদত, আমার জীবন, আমার মরণ (সবকিছুই) বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই (নিবেদিত)।’
(সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬২)

আর আল্লাহ তাআলা মানুষের জীবন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।’
(সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১১)

অতএব, যারা সব সময় আল্লাহর কাছে শাহাদাত লাভের আকাঙ্ক্ষা করবে, যাদের মৃত্যু শহীদি হবে, তাদের মৃত্যুর চেয়ে সৌভাগ্যের মৃত্যু আর কারো হতে পারে না। কারণ তারা ক্ষণস্থায়ী জীবন দিয়ে চিরস্থায়ী জান্নাতের মালিক হয়ে যায়।

কাউকে অন্যায়ভাবে শহীদ করে দিলেই সে শেষ হয়ে যায় না।

কেননা শহীদদের মৃত্যু হয় না। মহান আল্লাহ তাদের মৃত বলতে নিষেধ করেছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বোলো না, বরং তারা জীবিত কিন্তু তোমরা বোঝো না।’
(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫৪)

পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেওয়া ব্যক্তিদের বিশেষ মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যেক মৃত ব্যক্তিই কবরে বিশেষ ধরনের জীবন প্রাপ্ত হয় এবং সে জীবনে তারা কবরের আজাব বা সওয়াব ভোগ করে থাকে।

তবে সে জীবনের হালহকিকত দুনিয়াবাসীর জন্য পুরোপুরি স্পষ্ট করা হয়নি।
তবে যেসব লোক আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়, তাদের মৃত্যুকে অন্যদের মৃত্যুর সমপর্যায়ভুক্ত মনে করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা আখিরাত সফরের এই অধ্যায় অন্যান্য মৃতের তুলনায় ভিন্ন ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। হাদিস শরিফে তাদের সে জীবনের কিছু চিত্রের ধারণা পাওয়া যায়। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ওহুদ যুদ্ধের দিন যখন তোমাদের ভাইয়েরা শহীদ হয়, মহান আল্লাহ তাদের রুহগুলোকে সবুজ রঙের পাখির মধ্যে স্থাপন করলেন। তারা জান্নাতের ঝরনাগুলোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করে, সেখানকার ফলমূল খায় এবং আরশের ছায়ায় ঝোলানো সোনার ফানুসে বসবাস করে। তারা যখন নিজেদের মনঃপূত খাবার, পানীয় ও বাসস্থান পেল, তখন বলল, কে আমাদের এ সংবাদ আমাদের ভাইদের নিকট পৌঁছে দেবে, আমরা জান্নাতে জীবিত আছি, এখানে আমাদের নিয়মিত রিজিক দেওয়া হচ্ছে! (এটা জানতে পারলে) তারা জিহাদে অমনোযোগী হবে না এবং যুদ্ধের ব্যাপারে অলসতা করবে না। অতঃপর মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের কাছে তোমাদের এ সংবাদ পৌঁছে দেব।’ বর্ণনাকারী বলেন, মহান আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তোমরা তাদের মৃত মনে কোরো না। প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত, তারা তাদের রবের নিকট থেকে নিয়মিত রিজিক পাচ্ছে।’

[(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৬৯), (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫২০)]

পরকালের শহীদদের মর্যাদা আকাশচুম্বী হবে। তাদের পদমর্যাদা নবী-রাসুল ও সিদ্দিকদের পরেই হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর যারা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করে তারা তাদের সঙ্গে থাকবে, আল্লাহ যাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। আর সাথি হিসেবে তারা হবে উত্তম।’

(সুরা : নিসা, আয়াত : ৬৯)

হাদিস শরিফেও শহীদদের পরকালীন বিশেষ মর্যাদার বিভিন্ন নমুনা পাওয়া যায়। যার কিছু এই হাদিসে উল্লেখ আছে, মিকদাব ইবনে মাদিকারিব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শহীদের জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট ছয়টি পুরস্কার বা সুযোগ আছে। তার প্রথম রক্তবিন্দু পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ক্ষমা করা হয়, তাকে তার জান্নাতের বাসস্থান দেখানো হয়, কবরের আজাব থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়, সে কঠিন ভীতি থেকে নিরাপদ থাকবে, তাঁর মাথায় মর্মর পাথর খচিত মর্যাদার টুপি পরিয়ে দেওয়া হবে। এর এক একটি পাথর দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম। তার সঙ্গে টানা টানা আয়তলোচনা ৭২ জন জান্নাতি হুরকে বিয়ে দেওয়া হবে এবং তার ৭০ জন নিকটাত্মীয়ের জন্য তার সুপারিশ কবুল করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৬৬৩)

সুবহানাল্লাহ, এ তথ্যগুলো তো ততটুকুই যতটুকু আমরা কোরআন-হাদিসে পেয়েছি। কিন্তু তাদের মর্যাদা ও প্রতিদান মহান আল্লাহ কত বড় করবেন, তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন; আর আল্লাহ সংকীর্ণ করেন ও প্রসারিত করেন এবং তাঁরই নিকট তোমাদের ফেরানো হবে।’

(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৪৫)

আর যে ব্যক্তি তার জীবনটা আল্লাহর রাস্তায় দিয়েছেন, তার প্রতিদান কী হতে পারে, তা আল্লাহই ভালো জানেন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একমাত্র অধিপতি রাহমানুর রহিম মহান আল্লাহই জানেন তাদের যথাযথ প্রতিদান দিতে। মাখলুকের জন্য তার পরিধি চিন্তা করে বের করাও হয়তো সম্ভব নয়। এ জন্যই হয়তো আমাদের মাথার তাজ, কলিজার টুকরা বিশ্বনবী (সা.) নিজেও শাহাদাতের তামান্না করতেন। তিনি বলতেন, সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি পছন্দ করি আমাকে যেন আল্লাহর রাস্তায় শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, অতঃপর শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, আবার শহীদ করা হয়। (বুখারি, হাদিস : ২৭৯৭)। সেই নবীর প্রকৃত উম্মতরাও সত্য ও ন্যায়ের পথে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পিছপা হয় না। তাদের যদি শতবার জীবন দেওয়া হয়, তারা হয়তো শতবারই তাদের জীবন দ্বিন প্রতিষ্ঠায় উৎসর্গ করতে রাজি হবে। মহান আল্লাহ সব শহীদকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করুন। আমিন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর