স্টাফ রিপোর্টার,
সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর সেটেলমেন্ট অফিসে চলছে প্রকাশ্য দুর্নীতি ও অনিয়মের মহোৎসব। সরকারি কোনো নিয়োগপত্র ছাড়াই এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে “সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার” পরিচয়ে দায়িত্ব পালন করছেন— এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মো. বিল্লাল হোসেন, পিতা– মো. ইসলাম উদ্দিন, গ্রাম– মাঝাইর, ইউনিয়ন– পলাশ, উপজেলা– বিশ্বম্ভরপুর, জেলা– সুনামগঞ্জ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে অদ্যাবধি তিনি কোনো সরকারি চাকরিতে না থেকেও সেটেলমেন্ট অফিসে নিয়মিত হাজির হন। অফিসে তার জন্য নির্দিষ্ট টেবিল, চেয়ার, আলমারি এমনকি সরকারি নথিপত্রের প্রবেশাধিকারও রয়েছে। সরকারি সিল, রেজিস্টার ও ফাইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও মুহুরিদের মাধ্যমে ‘নামজারি’, ‘ডিপি’ ও ‘পর্চা’ তৈরি করে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অফিস-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বিল্লালের মাধ্যমে ৫০০ টাকায় মেলে ১৫০ টাকার সরকারি কাগজপত্র। কোনো আবেদনপত্র বা যাচাই-বাছাই ছাড়াই এসব কাজ সম্পন্ন করা হয়। এতে একদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন।
স্থানীয় দলিল লেখকদের (মুহুরি) সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তারা সেবা নিতে আসা মানুষকে সরাসরি বিল্লালের কাছে পাঠায়। ফলে প্রকৃত আবেদনকারীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
দৈনিক আমার সংগ্রাম-এর ভারপ্রাপ্ত প্রতিবেদককে বিল্লাল হোসেন জানান, তিনি নাকি “মাস্টাররোলে চাকরি করেন ১৪ বছর যাবত”। দাবি করেন, তিনি পূর্বে জীবন বাবু, বিমল বাবু, অলিউর রহমান ও সঞ্চায়ন তালুকদারের ড্রাইভার ছিলেন— এখন সেটেলমেন্ট অফিসে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের নথি অনুযায়ী, তার নামে কোনো সরকারি নিয়োগপত্র বা প্রমাণপত্র নেই। ফলে প্রশ্ন উঠেছে— সরকারি কোটি কোটি টাকার কাগজপত্রের দখলে একজন ভুয়া কর্মকর্তা কীভাবে প্রবেশাধিকার পেলেন?
অভিযোগকারী সাংবাদিক মো. শুকুর আলী জানান, বিষয়টি প্রকাশের প্রস্তুতি নিতে গেলে তিনি একাধিকবার অজ্ঞাত ব্যক্তির ফোনে প্রাণনাশের হুমকি পান। তার দাবি, স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল বিল্লাল হোসেনকে আড়াল করছে।
স্থানীয় জনসাধারণের দাবি—
অবিলম্বে বিল্লাল হোসেনের অবৈধ কর্মকাণ্ডের তদন্ত হোক,
অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ জব্দ করা হোক,
সরকারি কাগজপত্রের অপব্যবহার রোধে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হোক
দীর্ঘ ১২–১৪ বছর ধরে এই অবৈধ কর্মকাণ্ড চললেও এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পাঠানো হয়েছে
অনুলিপি প্রেরিত:
১. মহাপরিচালক, জরিপ অধিদপ্তর, ঢাকা।
২. সিনিয়র সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।
৩. মহাপরিচালক, এনএসআই সদর দপ্তর, ঢাকা।
৪. মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের প্রেস সচিব।
৫. আমির/সেক্রেটারি জেনারেল, বাংলাদেশ জামাতে ইসলাম, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা।
স্থানীয়দের ভাষায়—
“দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিশ্বম্ভরপুরের ভূমি প্রশাসনের ওপর জনগণের আস্থা পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।”