সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৪৬ অপরাহ্ন
নোটিশ:
তথ্য ও প্রচার মন্ত্রণালয় নিবন্ধনকৃত অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য পিপলস্ নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকে সারা দেশে জেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হবে। মোবাইল: ০১৭১১-১১৬২৫৭, ০১৭১২-৪০৭২৮২ ' ই-মেইল : thepeopelesnews24@gmail.com

ব্যাংকে ঢুকছে অলস টাকা

অনলাইন ডেস্ক: / ৭ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫

উচ্চ সুদে বিনিয়োগে অনাগ্রহী উদ্যোক্তারা। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও পুঁজিবাজারে লোকসানের ভয়ে বিনিয়োগ করছেন না। উল্টো মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে আমানতে উচ্চসুদ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সব মিলিয়ে মানুষ বিনিয়োগ না করে নগদ টাকা হাতে ধরে রাখার চেয়ে ব্যাংকে রাখাই নিরাপদ ও লাভজনক মনে করছেন। তারই প্রতিফলন দেখা গেছে সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে।

সেখানে বলা হয়েছে, মানুষ টাকা হাতে না রেখে ব্যাংকে জমা রাখার প্রবণতা বাড়ছে। এতে বিনিয়োগ স্থবিরতার পাশাপাশি ব্যাংকে অলস টাকার পরিমাণও বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদ মুদ্রার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

২০২৫ সালের জুন মাসে ব্যাংকের বাইরে মুদ্রার পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৯৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। তিন মাস পর ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৭৪ হাজার ৭২৪ কোটি টাকায়। এই সময়ে ব্যাংকের বাইরে থাকা মুদ্রার পরিমাণ কমেছে ৭.৩২ শতাংশ। অর্থমূল্যে যা ২১ হাজার ৭২৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অর্থাৎ, এই বিপুল অঙ্কের নগদ অর্থ আবার ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ফিরে এসেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে মুদ্রানীতি কড়াকড়ি করায় মানুষের ভোগ ও বিনিয়োগ প্রবণতা কমে যাচ্ছে। ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় আস্থাহীনতার পাশাপাশি ব্যাংকে টাকা রাখলে বাড়তি মুনাফার আশায় নগদ টাকা ব্যাংকে ফিরছে। এতে টাকার উৎপাদনশীলতা সংকুচিত হচ্ছে। অন্যদিকে নীতিসুদহার বৃদ্ধির কারণে মানুষের ঋণ প্রবণতা কম থাকায় তারাও টাকাগুলো বিনিয়োগ করতে পারছে না। এতে তাদেরও খরচ বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকিং খাতে আস্থার ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার, আমানতের ওপর তুলনামূলক আকর্ষণীয় সুদহার এবং আর্থিক লেনদেনে নজরদারি বাড়ানোর ফলে মানুষ নগদ অর্থ ঘরে না রেখে ব্যাংকে জমা দিচ্ছে। পাশাপাশি ডিজিটাল লেনদেন ও মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসের ব্যবহার বৃদ্ধিও ব্যাংকের বাইরে মুদ্রা কমার পেছনে ভূমিকা রাখছে। ব্যাংকের বাইরে মুদ্রার পরিমাণ কমা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত। এতে একদিকে ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতি উন্নত হবে, অন্যদিকে ঋণ বিতরণ সক্ষমতা বাড়ার মাধ্যমে বিনিয়োগ ও উৎপাদন খাতেও গতি আসতে পারে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সরকার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে চলমান অনিশ্চয়তা এবং বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের প্রভাবে মানুষ ব্যাংক  থেকে টাকা তুলে হাতে ধরে রেখেছে। ফলে আমানত অস্বাভাবিক হারে কমে গিয়েছিল। আর ব্যাংকের বাইরে রাখা টাকার পরিমাণ বাড়ছিল। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা উদ্যোগে ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। ফলে গ্রাহকদের মধ্যে যাঁরা অতিরিক্ত টাকা তুলেছিলেন, সেই টাকা আবার ব্যাংকে রাখতে শুরু করেছেন। আবার সুদের হার বাড়ায় নতুন আমানতও ব্যাংকে আসছে। তবে তার পরিমাণ খুব বেশি না। কারণ দীর্ঘদিন ধরে মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বেকারত্ব। এ কারণে সঞ্চয়ের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে ব্যাংকের আমানতও প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ছে না। আমানত না বাড়লে বিনিয়োগ বাড়বে না। আর বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে না, আয় বাড়বে না, সঞ্চয়ও বাড়বে না। ফলে অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি সংকট তৈরি হবে। বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য স্থিতিশীল বিনিয়োগ পরিবেশের ওপর জোর দেন তিনি।

এদিকে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানত বৃদ্ধিতেও ইতিবাচক ধারা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন মাসে দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৭৮ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। তিন মাস পর ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ১৫ হাজার ২৫৩.৫০ কোটি টাকায়। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংক আমানত ৩৭ হাজার ৮৪ কোটি টাকা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘সরকার বদলের পর কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার কারণে ব্যাংক খাতের ওপর একটি অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। মানুষ হুমড়ি খেয়ে টাকা তুলে নিচ্ছিল। ব্যাংক খাতের আমানতে টান পড়েছিল সে সময়। তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের তারল্য সহায়তাও দিয়েছিল। কিন্তু এক বছরের মধ্যে সেই চিত্র উল্টে গেছে। কিছু ব্যাংকের ওপর আস্থা কমলেও পুরো ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থা কমেনি। কারণ ব্যাংক খাতের সার্বিক আমানত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদ টাকা আবার ব্যাংকে ফেরত আসছে। আমরা লক্ষ করেছি, আমানতগুলো এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর হয়েছে মাত্র। এটি ব্যাংক খাতের জন্য একটি ভালো খবর। আমরা নিরলসভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরানোর চেষ্টা করছি। মুদ্রাপাচার বন্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমাতে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তাই আমরা আশা করি, শিগগিরই ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা ফিরে আসবে সাধারণ আমানতকারীদের।’

সূত্র: কালের কণ্ঠ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর