উত্তরের পথে গলার কাঁটা হিসেবে খ্যাত জরাজীর্ণ নলকা সেতুর অভিশাপ থেকে মুক্ত হলো বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক। অবশেষে খুলে দেওয়া হলো নবনির্মিত নলকা সেতুর উভয় লেন। এতে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের ২২ জেলার মানুষের যাতায়াতের এ সড়কটিতে ভোগান্তি কেটে যাবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
সোমবার (৪ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অনানুষ্ঠানিকভাবে সেতুটির উভয় ঢাকা গামী লেন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
এ সময় সেতু কর্তৃপক্ষের মীর আখতার হোসেন লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. এখলাস উদ্দিন, ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার শের শাহ, হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লুৎফর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের আগে ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি কমাতে এ সেতুর একটি লেন উত্তরবঙ্গগামী খুলে দেওয়া হয়েছিল।
সেতুটি নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার হোসেন লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. এখলাস উদ্দিন জানান, আপাতত সেতুর উভয় লেন খুলে দেওয়া হলো। এখনো ফিনিশিংসহ বেশ কিছু কাজ বাকি রয়েছে। আগামী বছরের মার্চের দিকে কাজগুলো শেষ করার পর সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।
জানা যায়, ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২২ জেলার সড়ক পথে যোগাযোগের অন্যতম রুট বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক।
১৯৮৮ সালে এ মহাসড়কের নলকা নামক এলাকায় ফুলজজোড় নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ হওয়ার পর এ সেতুর ওপর চাপ বাড়তে থাকে। কমতে থাকে এর স্থায়ীত্বকাল। একপর্যায়ে সেতুটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় এর ওপর দিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করতে থাকে যানবাহন। এ কারণে জরাজীর্ণ এ সেতুটিকে ঘিরে প্রতিবছর ঈদেই পুরো মহাসড়কে ভোগান্তি পোহাতে হয়। পরে সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক)-২ প্রকল্পের এলেঙ্গা-রংপুর চারলেন মহাসড়ক নির্মাণের আওতায় নতুন করে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ২৮৯ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটির ওপর রেলিং নির্মাণ ও সৌন্দর্য্যবর্ধনসহ বেশ কিছু কাজ এখনো বাকি। এমন অবস্থায় গত ঈদুল ফিতরে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে সেতুর একটি লেন খুলে দেওয়া হয়। এবার সেতুর দ্বিতীয় লেনটিও খুলে দেওয়া হলো।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি মো. লুৎফর রহমান বলেন, জরাজীর্ণ নলকা সেতুটি ছিল উত্তাঞ্চলের যাত্রাপথে গলার কাঁটার মতো। এ সেতুটিকে ঘিরেই সৃষ্টি হতো যানজট, দুর্ঘটনা আর দুর্ভোগ। এ সেতুটিকে নিয়েই আমারা তটস্থ থাকতাম। এ স্থানে নব-নির্মিত সেতুর উভয় লেন চালুর ফলে দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পাবেন উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা। দীর্ঘদিনের গলার কাঁটাও দূর হলো বলে জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সাসেক-২ প্রকল্প ব্যবস্থাপক আহসান মাসুদ বাপ্পী এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহায় ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি কমাতে সেতুটির দু’টি লেন আজ খুলে দেওয়া হলো। তবে সেতুর সৌন্দর্যবর্ধনসহ কিছু কাজ বাকি রয়েছে। আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত সেতুটির পূর্ণাঙ্গ নির্মাণকাজের মেয়াদ রয়েছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়েই এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে।
তিনি বলেন, সেতুর পূর্ব প্রান্তে একটি আন্ডারপাস নির্মাণকাজও চলছে।