সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
নোটিশ:
তথ্য ও প্রচার মন্ত্রণালয় নিবন্ধনকৃত অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য পিপলস্ নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকে সারা দেশে জেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হবে। মোবাইল: ০১৭১১-১১৬২৫৭, ০১৭১২-৪০৭২৮২ ' ই-মেইল : thepeopelesnews24@gmail.com

কুড়িগ্রামে বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় ভুয়া ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : / ৬ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার উৎসাহীপুর কেরামতিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসা এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে কাগুজে প্রতিষ্ঠান হিসেবেই বেশি পরিচিত। হাজিরা খাতায় শত শত ছাত্রী, অথচ শ্রেণিকক্ষে হাতে গোনা কয়েকজন-এমন ভুয়া ভর্তি দেখিয়ে বছরের পর বছর সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

স্থানীয় ও প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বালিকা দাখিল মাদ্রাসাটি একসময় সুনামের সঙ্গে চললেও গত সাত থেকে আট বছর ধরে কার্যত অচল অবস্থায় রয়েছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, মফস্বল অঞ্চলের একটি দাখিল বালিকা মাদ্রাসায় ন্যূনতম ২০০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা। অথচ মাদ্রাসার হাজিরা খাতায় ৩০৯ জন ছাত্রীর নাম থাকলেও গত ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় উপস্থিত ছিল মাত্র ৯৫ জন।


তদন্তে আরও জানা যায়, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পরীক্ষার্থী ছিল মাত্র ৪৮ জন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১২ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ৮জন, অষ্টম শ্রেণিতে ৮ জন, নবম শ্রেণিতে ১২ জন এবং দশম শ্রেণিতে মাত্র ৭ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। সব মিলিয়ে বাস্তবে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬৫ জনের বেশি নয়। অথচ প্রতিষ্ঠানটিতে সুপারিনটেনডেন্টসহ শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা ১৯ জন—যা শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে চরম অস্বাভাবিক।

২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষার ফলাফল প্রতিষ্ঠানটির ভেতরের চিত্র আরও নগ্ন করে দেয়। ১৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। পাসের হার মাত্র ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফলাফল শিক্ষার ব্যর্থতার পাশাপাশি প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনারও স্পষ্ট প্রমাণ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সুপারিনটেনডেন্টের একক নিয়ন্ত্রণে চলছে মাদ্রাসাটি। নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জমিদাতাসহ যোগ্য ব্যক্তিদের পরিচালনা কমিটিতে রাখা হয়নি; বরং নিজের লোকজন দিয়ে কমিটি গঠন করে প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। নিয়োগপ্রাপ্ত একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী অর্থ লেনদেনের কথা স্বীকার করলেও চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হননি।

ইবতেদায়ী শাখায় শিক্ষার্থী কম থাকায় শিক্ষকরা নিয়মিত মাদ্রাসায় উপস্থিত থাকেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় তাদেরকে পার্শ্ববর্তী বাজারে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। ফলে যেসব ছাত্রী নামমাত্র উপস্থিত থাকে, তাদের পাঠদান কার্যত বন্ধ।

স্থানীয়দের অভিযোগ আরও গুরুতর। বর্তমানে যে অল্পসংখ্যক ছাত্রী মাদ্রাসায় ভর্তি দেখানো হয়েছে, তাদের একটি বড় অংশ আশপাশের অন্যান্য মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। পার্শ্ববর্তী রওজাতুল জান্নাত আদর্শ বালিকা মাদ্রাসার শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, “আমার মাদ্রাসার ৩০ জনের বেশি ছাত্রী উৎসাহীপুর বালিকা মাদ্রাসা থেকে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ওদের শিক্ষকরা অভিভাবকদের অনুরোধ করে সেখানে ভর্তি দেখায়। এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না।”

এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মো. আব্দুল মান্নান স্বীকার করেন ছাত্রী সংখ্যা কম থাকার কথা। তিনি বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এলাকায় ছাত্রী খুঁজছি।” তবে ভুয়া ভর্তি, নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পরিচালনা কমিটির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি স্পষ্ট কোনো জবাব দেননি।

জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এত কম শিক্ষার্থী দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। মাদ্রাসার নাম ও তথ্য পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতে, দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এ ধরনের কাগুজে প্রতিষ্ঠানগুলো পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে—এই মাদ্রাসা কি সত্যিই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নাকি বছরের পর বছর ভুয়া কাগজপত্রের আড়ালে নিয়োগ ও সুযোগ-সুবিধার বাণিজ্য চলছে?


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর